লিনাক্স ব্যবহার করা কি উইন্ডোজ এর থেকে কঠিন?

না, লিনাক্স ব্যবহার করা মোটেও কঠিন কোন কাজ নয়।
আমি আমার অনেক বন্ধুদের এই প্রশ্ন করেছি যে তারা কেন লিনাক্স ব্যবহার করে না। বেশিরভাগ বন্ধু উত্তর দিয়েছে "দোস্ত লিনাক্স যে কঠিন, এত কমান্ড-টমান্ড দিয়ে কাজ করা যায় বল?"
আসলে যারা কখনো লিনাক্স ব্যবহার করেন নি তাদের ধারনা হল যে লিনাক্স এ সব কাজ কমান্ড লিখে লিখে করতে হয়, কোন সফটওয়্যার সাপোর্ট করে না ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা টা ভিন্ন। আমি গত ৪ বছর থেকে লিনাক্স ব্যবহার করে আসছি এবং আমি যতবার নিজেকে উইন্ডোজ এ সরানোর চেষ্টা করেছি আমি ব্যর্থ হয়েছি। এর কারণ হল আমার কাছে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এর থেকে অনেক বেশি ক্লিন এবং সহজ মনে হয়েছে। আসুন বিষয়টা নিয়ে আমরা কয়েক ধাপে একটু বিস্তারিত আলোচনা করি। এখানে কম্প্যারিজনের ক্ষেত্রে আমি Xubuntu 14.04.2 এবং Windows 8.1 কে ব্যবহার করছি।

দাম - প্রথমেই যেই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার তা হল দাম। উইন্ডোজ মোটে সস্তা কোন সফটওয়্যার না। Windows 8.1 Core Genuine এর দাম আপনারা নিচের লিঙ্ক এ গেলেই জানতে পারবেন
http://www.computersourcebd.com/microsoft/solution/windows-8-1_1845.html
কিন্তু আমরা সবাই টরেন্ট এর ভক্ত এবং বেশিরভাগ ইউজার পাইরেটেড কপি ব্যবহার করি। এর ফলে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয়। অবশ্য এখন অনেক ভাল এক্টিভেটর বের হয়েছে Windows 8.1 এর জন্য।
অন্যদিকে লিনাক্স আমরা ডাউনলোড করতে পারি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
http://xubuntu.org/getxubuntu/
এই লিঙ্কে গেলেই আমরা নামিয়ে নিতে পারব Xubuntu এর সর্বশেষ সংস্করণটি।
হার্ডওয়্যার রিসোর্স Windows 8.1 এর জন্য আপনার নিচের হার্ডওয়্যার রিসোর্স প্রয়োজন হবে -
  • Processor: 1 gigahertz (GHz) or faster with support for PAE, NX, and SSE2
  • RAM: 1 gigabyte (GB) (32-bit) or 2 GB (64-bit)
  • Hard disk space: 16 GB (32-bit) or 20 GB (64-bit)
  • Graphics card: Microsoft DirectX 9 graphics device with WDDM driver
http://windows.microsoft.com/en-us/windows-8/system-requirements
এবং Xubuntu এর জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার রিসোর্স হল -
  • Processor: 1 gigahertz (GHz) or faster with support for PAE, NX, and SSE2
  • RAM: 512 megabyte (32-bit) or 1 gigabyte (64-bit)
  • HDD: 6GB free space
সুতরাং বুঝতেই পারছেন লিনাক্স চালানোর জন্য আপনার অনেক শক্তিশালী কম্পিউটার লাগবে না। আপনার পুরনো কম্পিউটারেও খুব সহজেই আপনি চালাতে পারবেন লিনাক্স।
লুক এন্ড ফিল - উইন্ডোজ এর সর্বশেষ সংস্করণ (এই টিউনটি লেখার সময় পর্যন্ত) Windows 8.1 এর কিছু স্ক্রিনশট আমরা দেখি


এ দুটো স্ক্রিনশট হল Windows 8.1 এর স্টার্ট মেনু এর। আমি যতটুকু জানি যে মেট্রো ইউজার ইন্টারফেসের সব থেকে বেশি নিন্দিত ফিচার হল এটি। আমি নিজে এই ফিচার টি মোটেও পছন্দ করি নি। কারণ যখন আমার কোন একটি সফটওয়্যার রান করার প্রয়োজন হত আমাকে সবসময় সার্চ ব্যবহার করতে হত নাহলে এই বিশাল স্টার্ট স্ক্রিন এ খুঁজে বেড়াতে হত।
এবার আমরা দেখি Xubuntu 14.04.2 এর কিছু স্ক্রিনশট

Xubuntu 14.04.2 এর ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে ইন্টারফেস অনেক ক্লিন এবং ইউজারফ্রেন্ডলি। এখানে সব এপ্লিকেশন ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করা আছে যেন সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। ইন্টারনেট এ বিনামূল্যে পাওয়া যায় এমন কিছু থিম এবং ইকনপ্যাক এর সাহায্যে আমরা একে আরও সুন্দর করে তুলতে পারি

উইন্ডোজে একটা ট্রান্সফরম্যাশন প্যাক ইন্সটল করা তো সে মহা প্যারা আবার যদি কোন সিস্টেম ফাইল করাপ্ট হয় তাহলে তো কথাই নেই।
আমার মনে হয় দুটো অপারেটিং সিস্টেম এর ইউজার ইন্টারফেসের মধ্যে পার্থক্যটা আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
পারফরম্যান্স - পারফরম্যান্স এর দিক থেকে অবশ্যই আমি Xubuntu 14.04.2 কে এগিয়ে রাখবো। যদিও Windows 8.1 এ পারফরম্যান্স উইন্ডোজ এর আগের সংস্করণ গুল থেকে অনেক ভাল তবুও সেটা Xubuntu কে টক্কর দেয়ার মত নয়।
যারা অনেকদিন থেকে উইন্ডোজ ব্যবহার করছেন তারা সবাই জানেন যে উইন্ডোজ এ রেজিস্ট্রি রয়েছে। প্রতিদিন ব্যবহার এবং নতুন সফটওয়্যার ইন্সটল ও আনইন্সটলের কারণে রেজিস্ট্রি ডিফ্রাগমেন্টেড হয়ে পরে, এর ফলে কম্পিউটার দিন দিন স্লো হয়ে যায়। এছাড়া NTFS এ ফরম্যাট করা হার্ডডিস্ক ও প্রতিদিন ব্যবহারের কারণে ডিফ্রাগমেন্টেড হয়ে যায় এবং স্লো হয়ে যায়। উইন্ডোজের এইসব মেইন্টেন্যান্স এর পেছনে বেশ সময় দিতে হয় ইউজারদের।
অন্যদিকে লিনাক্স এর জন্য হার্ডডিস্ক কে EXT4 ফরম্যট এ নিতে হয়। EXT4 এ ফরম্যাট করা ডিস্ক ফ্র্যাগমেন্টেড হয় না কারণ EXT4 ফরম্যাটের ডিস্ক অটোমেটিকালি ফাইলকে ডিফ্রাগমেন্ট করে নেয় সুতরাং ডিফ্রাগমেন্টেশনের ঝামেলা নেই এবং মজার কথা হল লিনাক্সে কোন রেজিস্ট্রি নেই সুতরাং স্লো হওয়ার কোন কারণ তো দেখছি না।
সিকিউরিটি - ভাইরাস এর জন্য সবথেকে বেশি ভালনারেবল যে উইন্ডোজ সেটা আমরা সবাই জানি। এ কারণেই আমরা এত টাকা দিয়ে এন্টিভাইরাস সফটওয়ারর গুল কিনি। এছাড়া ম্যলঅয়্যার এর কথা ত বললাম ই না। লিনক্স এ ভাইরাস এর কন সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই, ভবিষ্যতে হতেও পারে কিন্তু আমরা বর্তমান কে নিয়ে আলোচনা করলেই ভাল হয়।
সফটওয়্যার সাপোর্ট - অনেকের ধারনা লিনাক্স এ কোন সফটওয়্যার সাপোর্ট করে না। কিন্তু ব্যাপার সেটা না। বেশিরভাগ উইন্ডোজ সফটওয়্যার এর অনেক ভাল বিকল্প লিনাক্সের জন্য রয়েছে। সাধারণত সবাই লিনাক্সে এসে IDM এবং Adobe Photoshop কে মিস করে। কিন্তু সুখের কথা হল লিনাক্সে দুতরই বিকল্প আছে। IDM এর বিকল্প XDM এবং Adobe Photoshop এর বিকল্প আছে GIMP। এর পরেও যদি আপনি Photoshop খুঁজেন তাহলে আছে Wine। Wine হল একটি ইমুলেটর যা ব্যবহার করে আপনি লিনাক্সে উইন্ডোজের মোটামুটি সফটওয়্যার চালাতে পারবেন। গেমস ও চালাতে পারবেন। সুতরাং আপনি সফটওয়্যার এর অভাব কখনোই অনুভব করবেন না। তবে Wine দরকার হবে বলে মনে হয় না। লিনাক্স এর ন্যাটিভ সফটওয়্যার গুলোই যথেষ্ট আমার কাছে মনে হয়। এমনকি আপনি যদি NVDIA অথবা AMD Radeon এর গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করেন তাও সমস্যা নেই। লিনাক্স এদের ড্রাইভার ও সাপোর্ট করে এবং আপনি ফ্রি ইন্সটল করতে পারবেন কন সমস্যা ছাড়া। এমনকি লিনাক্সের জন্য অভ্রও রয়েছে
http://linux.omicronlab.com/
গেমস সাপোর্ট -  যদিও আমি লিনাক্স কে সব ক্ষেত্রেই উইন্ডোজের থেকে এগিয়ে রেখেছি এই একটা ক্ষেত্রে লিনাক্স কে আমি একটু পিছিয়ে রাখবো। আপনি যদি হার্ডকোর গেমার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য উইন্ডোজ টাই পারফেক্ট। তাই বলে এমন না যে আপনি লিনাক্সে গেমস খেলতে পারবেন না। লিনাক্সের জন্য বেশ কিছু ভাল ভাল গেমস আছে যা আপনি খেলতে পারেন। উইন্ডোজের অনেক গেমস আপনি খেলতে পারবেন। আমি Wine এ আমি GTA, Half Life, Assassin's Creed আরও বেশ কিছু গেমস খেলেছি। আবার ভারচুয়াল বক্স দিয়েও গেমস খেলা যায়।
স্ট্যাবিলিটি - আপনি যদি Xubuntu এর LTS(Long Term Support) সংস্করণ ব্যবহার করেন তাহলে আপনি বড় কোন বাগের সম্মুখীন হবেন বলে মনে হয়না। LTS(Long Term Support) সংস্করণ বানানো হয় তাদের কথা ভেবে যারা সাধারণত অপারেটিং সিস্টেম বদলাতে চান না এবং এই সংস্করণ কে অনেকদিন পর্যন্ত অফিসিয়াল সাপোর্ট দেওয়া হয়। আর যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে যান তাহলে সমস্যা নেই, বিশাল একটি কমিউনিটি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার অপেক্ষায় আছে। আমি যে কয়টা সমস্যায় পড়েছি তাদের সমাধান আমি খুব সহজেই পেয়ে গেছি উবুন্টু ফোরামস এ। Windows ও বেশ স্টেবল কিন্তু অনেক সমস্যার আমি আমি কোন সমাধান পাই নি। সর্বশেষ যেই সমস্যা আমি ফেস করেছি তা হল মেমরি লিক। উইন্ডোজ আপডেট করার পরে আমার ৮ গিগাবাইট র‍্যাম এর মধ্যে প্রায় ৭ গিগাবাইট ফুল হয়ে থাকছিল। গুগল করে জানতে পারলাম যে এটা আপডেট করার পরে হচ্ছে। অনেকের তো ৩২ গিগাবাইট র‍্যাম ও ফুল হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু এর কোন সমাধান আমি পাই নি।
একজন ডেভেলপার এর কাছে লিনাক্স - আমি নিজে একজন কম্পিউটার সাইন্স এর ছাত্র। আমার একাডেমিক কাজের জন্য হোক আর নিজের শখের জন্য হোক, প্রোগ্রামিং এর জন্য লিনাক্স প্লাটফরম আমার কাছে সব থেকে সুবিধাজনক মনে হয়েছে। মোটামুটি সব প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এই কাজ করা যায় লিনাক্সে। উইন্ডোজে কিছু ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন অবজেক্টিভ-সি কুব একটা সুবিধাজনক না। আর সার্ভার এর জন্য লিনাক্স আমার কাছে উইন্ডোজের থেকে হাজার গুনে সিকিউরড মনে হয়েছে।
শেষকথা হল লিনাক্স উইন্ডোজের থেকে আমার কাছে সব দিক থেকেই অনেক ভাল মনে হয়েছে। যারা প্রতিদিন সাধারণ কাজের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করেন তারা কোন সমস্যা ছাড়াই লিনাক্স চালাতে পারবেন বলে আমার ধারনা। সাধারণ কাজ করা বলতে আমি বুঝাচ্ছি অফিসের কাজ করা, মুভি দেখা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, অদিও/ভিডিও নিয়ে কাজ করা, গেমস খেলা ইত্যাদি। চাইলে একবার টেস্ট করে দেখতেই পারেন.
Share on Google Plus

About Engr. Rokon Khan

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment